জ্বর হলে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেবে, এমন একটি বাহুবন্ধনী (আর্মব্যান্ড) তৈরি করেছেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। নিজস্ব শক্তিতে চলতে সক্ষম ও পরিধানযোগ্য এই যন্ত্রাংশ (ডিভাইস) শরীরের তাপমাত্রা কোনো কারণে বেড়ে গেলে, সে বিষয়ে সংকেত দিতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো শহরে অনুষ্ঠিত একটি বিজ্ঞানবিষয়ক সম্মেলনে ডিভাইসটি প্রদর্শন করা হয়েছে। ‘আইইইই ইন্টারন্যাশনাল সলিড স্টেট সার্কিটস কনফারেন্স’ শীর্ষক সম্মেলনটি শুরু হয়েছে গত রোববার থেকে; চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সম্মেলনে ডিভাইসটি প্রদর্শন করার আগে রোববার এটির বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলটির সদস্যরা। এতে জানানো হয়েছে, ওই বাহুবন্ধনীর জন্য বেশ কিছু নমনীয় (ফ্লেক্সিবল) জৈব উপাদান তৈরি করা হয়েছে। এগুলো সেই সব পরিধেয় ডিভাইসের সঙ্গে একেবারে মানানসই, যেগুলো অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা ও হৃৎস্পন্দনের মতো বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
নতুন ডিভাইসটি তৈরির ক্ষেত্রে যে গবেষক দলটি কাজ করেছে, তার নেতৃত্বে ছিলেন দুজন—টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্সের অধ্যাপক তাকাইয়াসু সাকুরাই ও গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক তাকাও সোমিয়া। ডিভাইসটিতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সিলিকন দিয়ে তৈরি একটি নমনীয় সোলার প্যানেল, পাইজো-ইলেক্ট্রিক স্পিকার, তাপমাত্রা নিরীক্ষণব্যবস্থা (সেন্সর) ও পাওয়ার সাপ্লাই সার্কিট।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে হৃৎস্পন্দন, দেহের তাপমাত্রাসহ এ ধরনের স্বাস্থ্য নির্দেশক বিষয়গুলোর ওপর অব্যাহতভাবে পর্যবেক্ষণ করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও রোগীদের বেলায় এভাবে হৃৎস্পন্দন ও দেহের তাপমাত্রার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হয়।
স্বভাবতই এ রকম কাজের জন্য যেসব সেন্সর ব্যবহার করতে হয়, সেগুলোকে বেশ কিছু গুণাবলিসম্পন্ন হতে হয়। সেন্সরগুলোকে হতে হয় নমনীয় ও তারহীন, যাতে করে রোগী আরাম অনুভব করতে পারে। এ ছাড়া এগুলোকে এমন হতে হয়, যার রক্ষণাবেক্ষণ করা লাগে না, আবার বাইরের কোনো উৎস থেকে জ্বালানি সরবরাহেরও দরকার পড়ে না। পাশাপাশি দামেও হতে হয় সস্তা, যাতে করে একবার ব্যবহারের পরই ফেলে দেওয়া যায় (ডিসপোজেবল)।
প্রথাগত যেসব সেন্সর রয়েছে, সেগুলো অনমনীয় উপাদান দিয়ে তৈরি। ফলে এগুলো ওই সব প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকেরা এই সমস্যা সমাধানের দিকেই বেশি মনোযোগী হন। তাঁদের ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন অর্গানিক উপাদান।
জ্বরের সতর্কবার্তা দিতে সক্ষম এই বাহুবন্ধনীতে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আগে কখনো ছিল না। এটাই প্রথম অর্গানিক সার্কিট, যা শব্দ উৎপাদন করতে পারে। এতে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছে অর্গানিক পাওয়ার সাপ্লাই সার্কিট। অর্গানিক সার্কিট ব্যবহারের কারণে ডিভাইসটি তাপমাত্রার বিষয়ে অডিও তথ্য প্রদান করতে সক্ষম। এর তাপসংশ্লিষ্ট নমনীয় সেন্সরটি তাপমাত্রায় হেরফের ঘটলে তা শনাক্ত করে থাকে। আর ডিভাইসটির অর্গানিক পাওয়ার সাপ্লাই সার্কিট ভবনের অভ্যন্তরের আলোর স্বল্পতার পরিবেশে ডিভাইসটির কর্মপ্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আলো ৭ দশমিক ৩ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
ডিভাইসটি নিয়ে খুবই আশাবাদী অধ্যাপক সোমিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের জ্বরের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিতে সক্ষম বাহুবন্ধনীটি প্রমাণ করেছে, এমন নমনীয় ও ডিসপোজেবল ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব, যা ব্যবহার করে স্বভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি তথ্য পাওয়া সম্ভব, যেটা স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়িয়ে দেবে। আমরা একটি তাপমাত্রা সেন্সর ও জ্বরের বিষয়ে সতর্কবার্তার বিষয়টিকে মাথায় রেখেই প্রযুক্তিটি তৈরি করেছি।’
সূত্র: ইউরেকঅ্যালার্ট ডট ওআরজি
0 comments:
Post a Comment